ইসলামে নারীর মর্যাদা ও অধিকার

লিখেছেন লিখেছেন মোঃ মোরশেদুল আলম আরিফ ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১১:৫৮:২০ রাত

আলোকিত পৃথিবীতে নর ও নারীর অবদান সবচাইতে বেশী। নারীর মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিশ্বজুড়ে আলোচনা সমালোচনার শেষ নেই। অথচ এই নারীকে মহিমান্বিত কে করেছে তা এখনো অনেক নারী অবগত নন। ফলে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার নামে ভয়াবহ বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। পৃথিবীতে ইসলামই সর্বপ্রথম নারীদের যথাযোগ্য সম্মান ও অধিকার প্রতিষ্ঠিত করেছে। ইসলাম পূর্বযুগে নারীদের মানুষ হিসেবে গন্য করা হতো না। স্ত্রী হিসেবে তারা ছিল চরম অবহেলার স্বীকার। কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণকে সামাজিক কলঙ্কের বোঝা মনে করে জীবন্ত কবর দেয়া হতো। সমাজে নারী জন্ম নেয়া ছিল অভিশাপ।

ইসলামের আগমনে নারীর প্রতি এ জঘন্য অত্যাচারের অবসান ঘটে। নারীর জীবনে আসে অনেক পরিবর্তন। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনের মাধ্যমে নারীর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের ঘোষণা দেন। এভাবে ইসলামই সর্বপ্রথম নারীদেরকে সমাজে স্বাধীন, সুস্থ ও সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার পথ প্রদর্শন করে।

কুরআনিক আইন নারীদেরকে সম্মান ও মর্যাদা দিয়েছে কন্যা, স্ত্রী ও মা হিসাবে। কন্যা হিসাবে ইসলামপূর্ব যুগে তার কোন মর্যাদাই ছিল না। সেক্ষেত্রে ইসলাম তাদের মর্যাদা দিয়েছে। পবিত্র কুরআন ঘোষণা করেছে- কন্যা সন্তান জন্ম গ্রহণ করলে তোমাদের খুশী হওয়া উচিত্।

হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে- যখন কন্যা সন্তান ভূমিষ্ট হয় তখন আল্লাহ পাক ফেরেশতাদের প্রেরণ করেন। তারা এসে বলে, পরিবারের সকলের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। অত:পর তারা তাদের বাহু দিয়ে

কন্যা সন্তানটিকে আগলে রাখে এবং তার মাথায় হাত রেখে বলে এক অবলা হতে আর এক অবলা বের হয়েছে। যে ব্যাক্তি এর রক্ষনাবেক্ষনে মনোযোগী হবে সে কেয়ামত পর্যন্ত সাহায্য পাবে। (আবু দাউদ শরীফ)

কন্যা সন্তানের ব্যাপারে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন, যে লোক দুটি কন্যা সন্তানকে যথাযথভাবে প্রতিপালন করবে সে ব্যাক্তি শেষ বিচারের দিন আমার সাথে অবস্থান করবে (পাশাপাশি একই হাতের দু’টি আঙ্গুলের মতো)। (মুসলিম শরীফ)

স্ত্রী হিসাবে ইসলাম নারীর মর্যাদা দিয়েছে। পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে- তারা তোমাদের পরিচ্ছেদ এবং তোমরাও তাদের পরিচ্ছেদ। (সূরা বাকারাহ-১৮৭) পবিত্র কুরআনে স্বামী-স্ত্রী সম্পর্ক মনিব দাসীর মতো নয়, বরং অত্যন্ত গভীর বন্ধুত্ব ও ভালবাসায় পরিপূর্ণ। (সূরা রুম: ২১)

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কণ্ঠে একই ধ্বনি উচ্চারিত হয়েছে- নারীগণ পুরুষদেরই সহোদর। (আহম্মদ আবু দাউদ)

ইসলাম সবচেয়ে মায়ের মর্যাদা দিয়েছে। এত মর্যাদা অন্য কাউকে দেয়া হয়নি। “মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত” নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর এই ঘোষণা নারীকে আরো মর্যাদাবান করেছে। একজন সাহাবী নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকটে এসে প্রশ্ন করলেন আমার নিকট খেদমত পাওয়ার বেশী হকদার কে? জবাবে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন- তোমার মা, দ্বিতীয়ত তোমার মা, তৃতীয়ত তোমার মা, অত:পর পিতা। (সহীহ বুখারী) একাধিকবার মায়ের কথা বলে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নারী জাতিকে সমাজে সম্মান দিয়েছেন।

ইসলাম নারীদের প্রকৃত অধিকার দিয়েছে। সুন্দরভাবে সমাজে আত্মসম্মানের সাথে বেঁচে থাকার অধিকার দিয়েছে। অমর্যাদা আর গ্লানির হাত থেকে রক্ষা করে শ্রদ্ধার সর্বোচ্চ আসন দান করেছে। পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সব ক্ষেত্রেই ইসলাম নারীর নায্য অধিকার প্রতিষ্ঠিত করেছে। ইসলাম নারীদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা দিয়েছে। কুরআনে সুষ্পষ্ট ঘোষণা এসেছে- পুরুষ যা অর্জন করে সেটা তার অংশ এবং নারী যা অর্জন করে সেটা তার অংশ।(সুরাহ নিসা- ৩২) আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন- পিতামাতা ও আত্মীয় স্বজনের পরিত্যাক্ত সম্পত্তিতে পুরুষদের যেমন অংশ আছে নারীদেরও তেমনি অংশ আছে। অল্প হোক কিংবা বেশী হোক, এ অংশ নির্ধারিত।(সুরাহ নিসা-৭)।

নারী তার স্বামীর কাছ থেকে দেনমোহর পেয়ে থাকে। পক্ষান্তরে পুরুষকে দেনমোহর পরিশোধ করতে হয় এবং এটা স্বামীর ওপর ফরয। পবিত্র কুরআন মজিদে আল্লাহ পাক বলেন- তোমরা স্বতঃপ্রবৃত হয়ে নারীকে তাদের দেনমোহর প্রদান করো। (সূরা নিসা : ৪) তাছাড়া স্ত্রীর ভরণপোষণ, বাসস্থান, চিকিত্সা, সন্তান সন্ততির যাবতীয় ব্যয়ভার বহন, বাবা মা ও ভাইবোনদের দায়িত্ব অপরিহার্যভাবে পালন করতে হয়। অর্থাত্ স্ত্রীকে কোন প্রকার আর্থিক দায়িত্ব পালন করতে হয় না। একজন নারী তার পিতার পরিত্যক্ত সম্পদ থেকে তার ভাইয়ের তুলনায় অর্ধেক পেলেও দাদা, স্বামী ও বৈপিত্রেয় ভাই থেকে সম্পদ লাভ করে থাকে, যা একত্র করলে ভাইয়ের তুলনায় অনেক বেশী হয়। কাজেই ইসলাম নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করেছে এ অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও অমূলক।

কোন নারী পুরুষ তাদের ওয়ারিশি সম্পদের তারতম্য মর্যাদার তারতম্য নির্দেশ করে না, বরং মর্যাদার দিক থেকে নারী-পুরুষ উভয় সমান। এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে সুস্পষ্ট ঘোষণা এসেছে- আমি তোমাদের মধ্যে কর্মে নিষ্ঠ কোন নর অথবা নারীর কর্ম বিফল করি না; তোমরা একে অপরের অংশ। (সূরা আলে ইমরান :১৯৫)

সুতরাং প্রগতিবাদীরা কি চায়? নারীদেরকে বিনোদনের সামগ্রী বানাতে চায়, ভোগের বস্তুতে পরিণত করতে চায়, না আবার জাহিলী সমাজের সেই নির্যাতিতা নারীর করুণ আত্মনাদ শুনাতে চায়। সেটাই আমাদের প্রশ্ন? ইসলাম নারীদেরকে সে সম্মান মর্যাদা ও অধিকার দিয়েছে যা অন্য কোন ধর্মে দেয়নি। আল্লাহ প্রদত্ত বিধান যা নারীদেরকে সম্মানিত করেছে। পৃথিবীর সকল নারী সমাজ এ বিধানের বিধানাবলী মেনে জীবন পরিচালনা করলে দুনিয়া আখিরাত উভয় জগতে কল্যাণকামী হবে।

বিষয়: বিবিধ

১৪৫৩ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

378081
২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬ সকাল ১০:৪৫
হতভাগা লিখেছেন : ইসলাম তো নারীকে অনেকভাবে মর্যাদা দিয়েছে । কিন্তু নারীদের মধ্যে ইসলামের যেটাতে তাদের লাভ সেটাতে ঝুঁকতে দেখা যায় এবং যেটা তাদের মনঃপুত হয় না সেটার বিপরিতে মনুষ্য আইনের আশ্রয় নিতে দেখা যায় ।

ইসলাম নারীকে কি কোন দ্বায়িত্ব পালন করতে বলে সন্তান গর্ভে ধারণ করা ও জন্মদান করা ছাড়া?
২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬ বিকাল ০৪:১৮
313378
মোঃ মোরশেদুল আলম আরিফ লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম
ইসলাম নারীকে এমন কোন দায়িত্ব দেয় নাই যা
তার কাছে কষ্টকর হবে। কষ্টকর কাজের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে অর্থোপার্জন। এই দায়িত্বটা ইসলাম পুরুষকে দিয়েছে। সুতারাং আমার মনে হয় না ইসলাম নারীদের কষ্টকর কোন দায়িত্ব দিয়েছেন।
ইসলাম নারীকে গৃহের রাণী বানিয়েছে। অর্থোপার্জনের দায়িত্ব স্বামীকে দিয়ে উপাজির্ত অর্থ সম্পদের দ্বারা গৃহের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দিয়েছে নারীকে। বাইরের কাজ থেকে নারীকে মুক্ত করার উদ্দেশ্যেই তার উপর সলাতুল জুমুয়া ফরজ করা হয়নি। যুদ্ধে যাওয়া তার উপর ফরজ নয়। জানাজায় অংশগ্রহণ করা থেকে তাকে বিরত রাখা হয়েছে। মসজিদে গিয়ে জামায়াতের সাথে সালাত আদায় করা তার জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়নি।
সত্য কথা বলতে আমরা ধর্মের ঐ টুকুই নি , যেটা আমাদের স্বার্থের পক্ষে যাই। স্বার্থের বিপক্ষে গেলে সেটা আমরা মেনে নিতে পারি না। তখন আমরা ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলি।
383670
৩০ জুলাই ২০১৭ সকাল ০৯:৩৪
Ruman লিখেছেন : সবই সার্থলোভি।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File